শৈশব থেকে চারুকলার ওপর জ্ঞানার্জন ও শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখা মৃৎশিল্পী মোঃ আনিসুল হক এর জন্ম ১৯৯২ সালের ২৫ জানুয়ারি দিনাজপুরে। সেই অভিপ্রায় নিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। শিল্প মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন মৃৎশিল্পকে।
মৃৎশিল্পী মোঃ আনিসুল হক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে চীন সরকার প্রদত্ত বৃত্তির আওতায় এক বছর মেয়াদী চীনা ভাষা শিক্ষা কোর্স করেন আনিসুল। পাশাপাশি চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অফ আর্টস থেকে দ্বিতীয়বারের মত মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করে দেশে ফিরে কাজ শুরু করেন ফ্রিল্যান্স শিল্পী হিসেবে।
চীন, আজারবাইযান, আর্মেনিয়া, মিশর, ফিনল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং তুরস্কের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নেন মৃৎশিল্পী | মোঃ আনিসুল হক অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫টি জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতেও। আনিসুলের সাফল্যের ঝুড়িতে রয়েছে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।

শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু ও শিল্পী ভাবনা
আমার কাছে, শিল্পকর্ম তৈরি একটি শক্তিশালী বার্তা এবং অর্থবহ কিছু যা সমাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে। সাধারণত আমি মৃৎশিল্প মাধমে শিল্পচর্চা করি, আমি মনে করি মৃৎশিল্পের সাথে মানুষের যে নৈসর্গিক সম্পৃক্ততা রয়েছে তা অন্য কোন শিল্প মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়না।
আমার কাছে মৃৎশিল্প হচ্ছে আমার ভাবনার বহিঃপ্রকাশ, আমার মনকে হালকা করা এবং সত্যকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে সৃজনশীল ভাবে উপস্থাপন করার উপায়।
মৃৎশিল্পী মোঃ আনিসুল হক
আমি বারাবরই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকি। সারা বিশ্বের সমসাময়িক সংবাদ নিয়ে অন্বেষণ করতে গিয়ে আমি সহিংসতা, দারিদ্র্য, যুদ্ধ, ক্ষুধার গল্প দেখেছি এবং শুনেছি, যা আমাকে এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করতে বাধ্য করেছে।
আশা করি এই ভাবনা সমাজে একটি পরিবর্তন আনতে পারে এবং মানবতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে। এজন্যই আমি আমার শিল্পকর্ম তৈরি করি মানবতার একটি দুর্ভাগ্যজনক দিক নিয়ে।
শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু
আমি আমার মৃৎশিল্পের কাজে মাটির সাথে কাপড় একত্রিত করি যা আমার শিল্পকর্মে নিজস্ব গঠনবিন্যাস রূপে ভিন্ন অভিব্যাক্তি প্রদান করে।
এই বেদনাদায়ক কাপড়ের গঠনবিন্যাস আজ আমাদের বিশ্বের সমসাময়িক পরিস্থিতি যেমন বর্ণবাদ, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বিস্তার, নিপীড়ন ও মানবতার অবক্ষয়। আমার কাছে লৌকিক সম্বন্ধীয় বিষয় নিয়ে কৌতূহল কাজ করে যা আমাকে এই বিষয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করতে উৎসাহিত করে।
আমি আমার শিল্পকর্মে আমাকে ঘিরে মানুষের আবেগ ধরার চেষ্টা করছি। আমি বিশ্বাস করি যে কোন অর্থবহ শিল্পকর্ম সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতা রাখে। আমার শিল্পকর্মগুলো বহুমুখী আয়নার মতো যেখানে দর্শক সমসাময়িক সমস্যা ও ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করতে পারে ।
আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ- মানব সেবা। আমরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করি বা কোন জাতি বা দেশ থেকে এসেছি তাতে কিছু যায় আসে না, আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা মানুষ। সমাজ আমাদের জন্য আমরা সমাজের জন্য নয়, আমাদের সবার একসাথে এগিয়ে যাওয়া উচিত। প্রত্যেকের উচিত শান্তির জন্য রুঁখে দাড়ানো।
শিল্পীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং ব্লগ সাইট থেকে ।
লিঙ্ক :
Facebook page: https://www.facebook.com/CRAMIC7anis/
blogsite: https://artisticanis.blogspot.com/?m=1
আরও পড়ুন
লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প
পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং
বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য
তারেক মাসুদ: সিনেমার ফেরিওয়ালা
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি
এক সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম—ঝিনুক শিল্প
চাই ও বাংলার মাছ ধরার ঐতিহ্য
ত্যাগ ও ভালোবাসার গল্প: বাবা দিবসের অনুপ্রেরণা
আষাঢ়ের প্রথম দিনে বর্ষার বন্দনা
মুঘল স্থাপত্যের মায়াবি ছোঁয়া: সুরা মসজিদ
BFA